মেজর জেনারেল (অবঃ) মোঃ সুবিদ আলী ভূঁইয়া ১৯৪৫ সালের ২৮ জুলাই কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার জুরানপুর গ্রামের প্রসিদ্ধ ভূঁইয়া বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম আঃ হালিম ভূঁইয়া, মাতা মরহুমা বেগম করিমুন্নেছা। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। জনাব ভূঁইয়ার পিতামহ মরহুম জউনউদ্দিন ভূঁইয়া দাউদকান্দি উপজেলার (বর্তমান তিতাস উপজেলা) অনন্তর্গত বলরামপুর ইউনিয়নের অধীনে গাজীপুর প্রসিদ্ধ ভূঁইয়া বাড়ি থেকে জুরানপুরে বসতি স্থাপন করেন। উল্লেখ্য, সোনারগাঁওয়ের শাসক বার ভূঁইয়াদের একজন অধঃস্থন পুরুষ গাজীপুর ভূঁইযা বাড়ির প্রথম পুরুষ ছিলেন। শিক্ষাজীবন: জেনারেল ভূঁইয়া শিক্ষা জীবন শুরু করেন ঝাঁউতলী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। পরে জামালকান্দি উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান তিনি ৪ বছর অধ্যয়নের পর ১৯৬০ সালে দাউদকান্দি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক এবং ১৯৬২ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই এ পাশ করেন। ১৯৬৫ সালে স্যার সলিমুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের ইতিহাসের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে বিএ (অনার্স) পাশ করেন। একই বছর তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। চাকরিকালীন ১৯৭৯ সালে তিনি মালয়েশিয়া থেকে কৃতিত্বের সাথে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পি,এস,সি, ডিগ্রী লাভ করেন। স্বপ্নের বাস-বায়ন: ছাত্রজীবন থেকেই সেনাবাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগদানের স্বপ্ন ছিল তাঁর। ১৯৬৫ সালে আইএসএসবিতে নির্বাচিত হয়ে কাকুলস পাকিস্তান মিলিটারী একাডেমিক ক্যাডেট হিসেবে যোগদান করলে তাঁর সেই স্বপ্নের বাস-বায়ন ঘটে। এরপর ভূঁইয়া বেলুচ রেজিমেন্ট কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে কোয়েটার ৩৬নং বেলুচ রেজিমেন্ট সেকেন্ড লেফটেন্যান্স হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে ক্যাপ্টেন হিসেবে চট্টগ্রাম সপ্তম ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। একই বছর তিনি চট্টগ্রাম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে বদলি হন। স্বাধীনতা যুদ্ধ: জেনারেল ভূঁইয়া বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রথম কাতারের একজন বীরসেনানী। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। তখনকার সেই তরুন ক্যাপ্টেন ভূঁইয়া দেশ ও জাতির আহবানে সারা দিয়ে পুরো নয় মাস জীবনবাজি রেখে বীরত্বের সাথে লড়াই করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম লড়াই ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক কুমিড়ার লড়াই তাঁর নেতৃত্বেই হয়েছিল। যা মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে পাক হানাদার বাহিনীর কাছে আতঙ্কের সৃষ্টি করে। এই যুদ্ধে পাকিস্তানী কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল শাহপুর খান বখতিয়ার ও একজন লেফটেনেন্টসহ বিভিন্ন পদে ১৫২ জন পাকিস্তানী সেনা নিহত হয়। কুমিড়ার এই লড়াইটিই ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধে প্রথম ও মুখোমুখি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। কুমিড়ার যুদ্ধের এই সাফল্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের সূচনালগ্নে ২৯ মার্চ ১৯৭১ সালে তাঁর নামে চট্টগ্রামের কালুরঘাটের মদনাঘাটস স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে একটা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল। ঘোষণাটি ছিল যার যার অস্ত্র নিয়ে লালদীর্ঘ ময়দানে ক্যাপ্টেন ভূঁইয়ার কাছে রিপোর্ট করুন। সেই দিরেন সেই ঘোষণা আর কুমিড়ার লড়া আজ ইতিহাসের অংশ। জেনারেল ভূঁইয়া ৩নং সেক্টরের তেলিয়াপাড়া যুদ্ধেও অসীম সাহসিকতার পরিচয় দেন। উল্লেখ্য, নয় মাসের যুদ্ধে কয়েকবার মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে মরতে মরতেই তিনি বেঁচে যান। মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে মেজর জিয়াউর রহমান এবং পরে সিলেট অঞ্চলে মেজর সফিউল্লাহ নেতৃত্বে দেশ শত্রু মুক্ত না হওয়া পর্যন- যুদ্ধে লড়ে যান। চাকুরি জীবনে রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা স্বাধীনতার পর আর দশকের মতো জেনারেল ভূঁইয়াও কঠিন শ্রম ও মেধা দিয়ে সেনাবাহিনীকে গড়ে তুলেন। দীর্ঘ ৩২ বছর সেনাবাহিনীতে সততা, আন-রিকতা ও দক্ষতার সাথে চাকুরিকালীন সময়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য কয়েকটি হলঃ- ১৯৮৮ সালের প্রলয়ঙ্করি বন্যায় তিনি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে বিগ্রেড কমান্ডার হিসেবে বন্যা প্লাবিত প্রায় ৩০ হাজার বন্যার্ত লোককে সেনানিবাসে আশ্রয়-সেবা দিয়ে মানবিক দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁর এই ত্রাণ তৎপরতা বিবিসি ও ভয়েস অব আমেরিকাতে প্রচারিত হয়। ঘাটাইলের এই ত্রাণ তৎপরতা বেশী পত্রিকাগুলোর পাশাপাশি নিউইয়র্ক টাইমস্, লন্ডন ডেইলি, অস্ট্রেলিয়ার দি এজ, ইন্টারন্যাশনাল হেরাল্ড ট্রিবিউন প্রতিবেদন ছাপায়। এছাড়া বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে এই সংবাদ নিয়মিত প্রচার করা হয়। ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রাকৃতিক মহাদুর্যোগে সরকারের চীফ কো-অর্ডিনেটর হিসেবে জেনারেল ভূঁইয়া সেই মহাদুর্যোগের পরিস্থি কাটিয়ে উঠতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন-যা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। শতাব্দির প্রচন্ডতম জলোচ্ছ্বাসে গোটা জাতি যখন দিশেহারা, দুলাখ লোকের মৃত্যুতে বিহবল তখন প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও সমন্বয় সেলের মুখ্য সমন্বয়কারী হিসেবে ত্রাণ কর্মকান্ড অত্যন- দক্ষতার সাথে বিপুল ত্রাণ সামগ্রী, সরঞ্জাম, হেলিকপ্টার এবং জেনারেল স্ট্যাক পোলের নেতৃত্বে পৌছায় মার্কিন টাস্কফোর্সের এক সুবিশাল বাহিনী। তাদের অপারেশন সী-এন্ডুলস্ এর পাশাপাশি দেশী-বিদেশী সংস্থা ও মিশনের সাথে এদেশেরও বেসামরিক ত্রাণ তৎপরতায় সুষ্ঠু সমন্বয় ঘটিয়ে জনাব ভূঁইয়া আরও একবার দেশ সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। ১৯৯৮-এর প্রলয়ঙ্করী বন্যায় তথা প্রাকৃতিক দুর্যোগে দাউদকান্দির প্রত্যন্ত- দুগর্তদের পাশে সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন তিনি। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সাহস গুগিয়েছেন। সেই সময়ে বন্যার্তদের সেবায় দীর্ঘ ২৭ দিন ত্রাণ তৎপরতা চালান। ২০০৪-এর বন্যায়ও একই কর্মসূচী হাতে নেন। চাকরি জীবনে জেনারেল ভূঁইয়া রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ পর্যন- প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন আহমদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার (১৯৯১-৯৬) সরকারের সময় প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করেন। ৫ বছর ৮ মাসই কেটেছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসও হিসেবে। ২০ মে ১৯৯৬। এদিন বাংলাদেশের ভাগ্যাকাশে নেমে এসেছিল এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি সেদিন দেশ ও গণতন্ত্রের ওপর দেখা দিয়েছিল প্রচন্ড এক হুমকি। ঢাকার রাজপথে নামানো হয়েছিল ট্যাংক। সে সময় একটি নিশ্চিত রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থান থেকে দেশ, জাতি, গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষায় জেনারেল ভূঁইয়া অন্যতম ভূমিকা রাখেন। কর্মক্ষেত্রে মূল্যায়ন: সেনাবাহিনীর অফিসারদের মধ্যে যে কজন বহুল আলোচিত ব্যক্তি মেধা, দক্ষতা ও সততার স্বাক্ষর রাখেন তাঁদের মধ্যে জেনারেল ভূঁইয়াও একজন। জেনারেল ভূঁইয়া সেনাবাহিনীতে তাঁর যোগ্যতা, সততা, দক্ষতা ও কঠোর কর্মনিষ্ঠার জন্য স্বীকৃতি স্বরূপ ধাপে ধাপে পদোন্নতি পান। তিনি যুদ্ধ ক্ষেত্রে মেজর, ১৯৭৩ সালে লেফটেনেন্ট, ১৯৭৮ সালে কর্ণেল, ১৯৮২ সালে ব্রিগেডিয়ার এবং ১৯৯২ সালে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি লাভ করেন। তাছাড়া চাকরি জীবনে তিনি বিভিন্ন পদকে ভূষিত হন। এর মধ্যে তামগায়ে জং, রণতারকা, সমর পদক, মুক্তি তারকা, জয়পদকসহ ১৬টি পদক রয়েছে। সমাজসেবক জেনারেল ভূঁইয়া জেনারেল ভূঁইয়া চাকুরীজীবী হয়েও তার এলাকার কথা কখনও ভুলেননি। সেনাবাহিনীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ও কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্যে থেকেও অনেকটা শিকড়ের টানে তিনি বার বার ছুটে গেছেন দাউদকান্দির মানুষের কাছে। জেনারেল ভূঁইয়া মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন যিনি গ্রামকে ভালবাসেন তিনি দেশকেও ভালবাসেন। কারণ দেশপ্রেম শুরু হয় নিজ গ্রাম থেকেই তাই চাকরির ফাঁকে ফাঁকে দীর্ঘ তিন দশক ধরে কঠোর মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে তিনি তিলে তিলে গড়ে তোলে তার নিজ গপ্রমা জুরানপুরে একটি বিশাল কজ কমপ্লেক্স। চাকুরি জীবনের শুরুতে, বলা যায় অনেকটা মনের অজানে-ই এলাকার বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। সশস্ত্র বাহিনীর একজন উচ্চ পদস্থ অফিসার হয়েও গ্রামের লোকের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন নি। এলাকার গরীব-দুস্থ অসহায় মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের পাশে থেকেছেন। চাকরিকালীন সময়েই দাউদকান্দি উপজেলা থেকে ৫ কি. মি দূরে সুবিধাবঞ্চিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের জন্য ১৫০ বিঘা জমির উপর গড়ে তুলেন বিশাল এই কমপ্লেক্স। যার সিংহ ভাগজুড়ে রয়েছে সমাজ সেবা ও জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, স্কুল, কলেজ, লাইব্রেরী, ডাকঘর, ব্যাংক, হাসপাতাল, বাজার টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, স্টেডিয়াম, কবরস্থান ৩৩টি প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কলেজ, এতিমখানা ও ছাত্রাবাস। এলাকাবাসীর অনুরোধ ১৯৯৩ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জুরানপুর আদর্শ ডিগ্রী কলেজ। সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ মনোরম পরিবেশে গড়ে তুলেন এই কলেজটি । যাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ৭টি ছাত্রাবাসও রয়েছে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছরই বোর্ডে মেধা তালিকায় কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখে কলেজটি। সমাজের অসহায় অবহেলিত পিতৃমাতৃহীন এতিম ও নিঃস্ব ছিন্নমূলদের আশ্রয় ও সেবার জন্য ১৯৮৩ সালে গড়ে তুলেন একটি এতিমখানা। যা অনাথ এতিমদের একটি সুন্দর ঠিকানা। এখানে উল্লেখ না করলেই নয়, আমাদের দেশে একটা প্রবণতা আছে কেউ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সমাজ সেবামূলক প্রতিষ্ঠান করলে তা নিজের নামে করে থাকেন কিন্তু জেনারেল ভূঁইয়া এ থেকে ব্যতিক্রম। তিনি এ ধরনের সংকীর্ণতাকে আশ্রয় দেননি। অথচ উন্নত বিশ্বে কোন প্রতিষ্ঠান নিজের নামে করার কথা কল্পনাও করা যায় না। নিজ গ্রামকে উচ্চতর আসনে স্থান দিতে গিয়ে কলেজটির নামকরণ করেন জুরানপুর আদর্শ কলেজ। কলেজটিকে রাখা হয় ধূমপান ও রাজনীতি মুক্ত। যাত্রার শুরুর পর কিছুদিনের মধ্যেই কলেজটির সুনাম ছড়িয়ে পরে দেশব্যাপী। ফলে সারা দেশ থেকে শত শত শিক্ষানুরাগী মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা চলে আসে এখানে। জ্ঞান চর্চার অনুকূলে পরিবেশ এসে পাল্টে গেছে এলাকার জীবনচিত্র। কেবল পুঁথিগত বিদ্যাই নয়, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায় এবং সুষ্ঠু জীবনবোধ সম্পর্কে শিক্ষাদানের জন্য সকলেই মডেল হিসেবে বিবেচনা করতে থাকে এই আদর্শ প্রতিষ্ঠানটিকে। প্রতি বছরই ছাত্র-ছাত্রীরা কলেজকে সম্মানীত করে তাদের কৃতিত্ব দিয়ে। মেধা তালিকায় ছাত্র-ছাত্রীদের অবস্থান ছিল গর্ব করার মত। তার এই কমপ্লেক্সে ৩৩টি প্রতিষ্ঠান থাকলেও কোনটিই নিজের নামে করেননি তিনি। দুটি উদাহরণ থেকেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ৭টি ছাত্রাবাসের মধ্যে একটির নাম হযরত আলী ছাত্রাবাস। এর নামকরণেও একটি ইতিহাস আছে। দাউদকান্দির তালতলী গ্রামের অধিবাসী মরহুম হযরত আলী ছিলেন জেনারেল ভূঁইয়ার আরবী শিক্ষক। যাঁর কাছে তার লেখার হাতেখড়ি। তাঁর প্রতি ভক্তি ও শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ তাঁর নামে প্রতিষ্ঠা করেন হযরত আলী ছাত্রাবাস। ছাত্র-ছাত্রী ও এলাকাবাসীর বিনোদন তথা খেলাধূলার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন একটি স্টেডিয়াম। যেটি নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম নামে। জেনারেল ভূঁইয়ার মানবীয় দৃষ্টানে-র আরো একটি প্রমাণ- একটি ছাত্রাবাস নির্মাণের প্রয়োজনে কলেজ সংলগ্ন একটি বাড়ীর বিনিময়ে কলেজের পার্শ্ববর্তী এলাকার ১৮টি বাড়িতে ৪০টি পরিবারের জন্য ৪০টি টিনের ঘর, ৪০টি টিউবওয়েল, ৪০ ল্যাট্রিন নির্মাণ করে দিয়েছেন। এছাড়া তিনি তাদেরকে পেশা অনুযায়ী রিক্সা, নৌকা, জাল, গাভী ও নগদ টাকা দিয়ে পুনর্বাসিত করেন। কলেজের একটি ছাত্রাবাসের প্রয়োজনে যে বাড়িট নেয়া হয়েছে তার বিনিময়ে তিনি বাড়ীর মালিকদের যেভাবে পুনর্বাসিত করেছেন তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এক বিরল ঘটনা। কমপ্লেক্সের এরিয়াটি শহরের আদলে তৈরি। যেন গ্রামের ভিতর পুস্পশোভিত ছায়াঘোরা একটি শহর। যে কেউ একবার দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। দেশের বিনোদন প্রিয়দের কাছে এটি পিকনিক স্পষ্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। এই ক্যাম্পাসটিতে সরকারের মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, সংস্কৃতিসেবী, সমাজসেবক এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের পদচারণা পড়ছে। চাকরি জীবনে জেনারেল ভূঁইয়ার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অবদান হল বেকার যুবকদের চাকুরি দেয়। তিনি দাউদকান্দি, মতলব, হোমনা, চান্দিনা, কচুয়া ও গজারিয়ার ৬/৭ হাজার বেকার যুবককে সেনাবাহিনী, বিডিআর ও পুলিশে চাকরির ব্যাপারে সহায়তা করেন। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও অনেকের চাকুরির ব্যবস্থা করেন। দাউদকান্দির এমন কোন গ্রাম আছে বলে মনে হয় না যেখানে তিনি চকির দেননি। সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে যেভাবে এলাকার লোকদের চাকরি দিয়েছেন তা সত্যিই একটা বিরল দৃষ্টান্ত তাঁর কাছে চাকরির জন্য কিংবদন্তীর মত হয়ে আছেন। তাঁর এই আবেদনের জন্য এলাকার লোকজন বিশেষ করে বৃদ্ধরা তাঁকে এখনও ক্যাপ্টেন সুবিদ আলী হিসেবে সম্বোধন করে থাকে। শুধু চাকরিই নয়; চাকরিকালীন সময়েই তিনি শহীদ নগর-জুরানপুর, জুরানপুর-দাউদকান্দি, জুরানপুর-পালের বাজার, গোয়ালমারী-শ্রীরায়ের চর রাস্তা নির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চাকরি জীবনে এই ধরনের সমাজসেবামূলক কাজের দৃষ্টান্ত বাংলাদেশে বিরল। এছাড়া তিতাস উপজেলা গোপালপুরে মসজিদ নির্মাণ, বিটেশ্বরে মসজিদ সংস্কার ও আধুনিককরণ, দাউদকান্দি বাসস্ট্যান্ড মসজিদের দ্বিতল ভবন নির্মাণ; ঢাকারগাঁও এতিমখানায় অনুদান, পেনশনের টাকায় শহীদ নগর আব্দুল জলিল উচ্চ বিদ্যালয় ভবন নির্মাণ, বাহের চরে কবরস্থান নির্মাণ, গৌরিপুর বাজারে মসজিদের সংস্কারে অনুদানসহ বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় এবং সংস্কার সহযোগিতা করেছেন। ১৯৯৭ সালে চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করলেও সমাজ সেবামূলক কাজ থেকে পিছিয়ে নেই তিনি। এখনও দাউদকান্দির বিভিন্ন সামাজিক ও উন্নয়নমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে চলেছেন। এছাড়া চাকরি জীবনে তিনিব যে স্টেশনে কাজ করেছেন সেখানেই কল্যাণমূলক কাজের নির্দেশন রেখে এসেছেন। লেখ হিসেবে জেনারেল ভূঁইয়া মুক্তিযুদ্ধের দীর্ঘ নয় মাসের স্মৃতিচারণগুলো তিনি ডায়রিতে লিখতেন। সেই ডারিকে ভিত্তি করে ১৯৭২ সালে মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রথম বই মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস শিরোনামে একটি বই লিখেন, যাতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অনেক অজানা তথ্য। স্বাধীনতার পর পরই বইটি প্রকাশে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এছাড়া এ পর্যন- বিভিন্ন সমসাময়িক ঘটনার উপর দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিকে তাঁর সাক্ষাৎকার, কলম ও নিবন্ধ ছাপা হয়েছে অর্ধ শতেরও অধিক। দেশ ভ্রমণ: ব্যক্তিগত জীবনে তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্যে-ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, ইতালী, জার্মানী, আমেরিকা, কানাডা, রাশিয়া, অষ্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ইয়োগোশ্লাভিয়া, জাপান, চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং, থাইল্যান্ড, আবুধাবি, সৌদিআরব, ভারত, পাকিস্তানও রয়েছে। তিনি সস্ত্রীক ১৯৮৭ সালে পবিত্র হজ্জ্ব পালন করেন। পারিবারিক পরিচয়: জেনারেল ভূঁইয়ার সহধর্মিনী বেগম মাহমুদা আখতার ভূইয়া। মাহমুদা ভূঁইয়া দাউদকান্দির বিটেশ্বরের ঐতিহ্যবাহী ভূঁইয়া পরিবারের বিদ্যুৎসাহি, সাংস্কৃতিসেবী ও সমাজসেবক, বিশিষ্ট প্রকাশক, আহমাদ পাবলিশিং হাউসের স্বত্ত্বাধিকারী স্বর্ণপ্রদকপ্রাপ্ত মরহুম মহিউদ্দিন আহমেদের কণ্যা। তিন ছেলের জনক জেনারেল ভূঁইয়ার সব ছেলেই মির্জাপুরে ক্যাডেট কলেজে কৃতিত্বের সাথে লেখাপড়া শেষ করেন। দ্বিতীয় ছেলে শওকত আলী মেধা তালিকায় এসএসসিতে ৭ম এবং এইচএসসিতে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন। বড় ছেলে মোহাম্মদ আলী সেনাবাহিনীতে মেজর পদে ক�
Copyright © 2015 All rights Reserved
Powered by: Rapid IT